জেসমিন চৌধুরী :: গত এক সপ্তাহে বাংলাদেশে যত ধর্ষন এবং শিশু নির্যাতনের ঘটনা পত্রিকায় এসেছে তা অকল্পনীয়, অভূতপূর্ব, নজিরবিহীন। এসব ঘটনাকে এড়িয়ে যাওয়াই সৃজনশীল মনের মানুষের জন্য সর্বোতকৃষ্ট পন্থা বলে মনে হচ্ছে। আমার যেসব সুশীল বন্ধুরা গান কবিতা শেয়ার করেন তাদের নীরবতা দেখে ভাবি তারা এসব নিয়ে কী ভাবছেন? প্রতিবাদ করে কী হবে, তাই তো? শেয়ার তো হচ্ছে, কিছু লাভ হচ্ছে না, তাই তো?
কিন্তু ধর্ষিত মেয়েটি যদি আমি হতাম, নির্যাতিত শিশুটি যদি আমার মেয়ে হতো, আমি কী চাইতাম? আমি কি চাইতাম না প্রতিটি মানুষ এর প্রতিবাদে সরব হোক? আমি কি চাইতাম না পুরা দেশ প্রতিবাদে ফেটে পড়ুক? তনুর ধর্ষন আর হত্যার জন্য অনেক আন্দোলন হয়েছিল, মানব বন্ধন হয়েছিল। প্রতিটি ধর্ষনের জন্য কেন তা হচ্ছে না? আমরা কি ক্লান্ত হয়ে পড়ছি? নাকি ধর্ষিত মেয়েটি ইউনিভার্সিটির ছাত্রী হলে, শিল্প সাহিত্যের চর্চা করে থাকলে আমাদের বিবেক বেশি জাগ্রত হয়ে উঠে? শ্রেণী বৈষম্য কি এক্ষেত্রেও কাজ করে?
ধর্ষনের বিরুদ্ধে আরো সোচ্চার হোন। প্রতিবাদ মুখর হোন। প্রতিটি নারীর ধর্ষন মানেই আমাদের বিবেকের ধর্ষন। নিজের ঘরের নারীদের আরো ক্ষমতাবান করে গড়ে তুলুন। আত্মরক্ষার বিভিন্ন পদ্ধতি শেখানোর ব্যবস্থা করুন। চাচা মামা খালুদের উপর অবিচলিত আস্থা না রাখতে শেখান। এতে হারাবার কিছু নেই। নারীর সার্বিক ক্ষমতায়ন ছাড়া একটা দেশে ধর্ষনের সংখ্যা কিছুতেই কমিয়ে আনা সম্ভব নয়।
একথা বলার পর আবার ভাবছি, যেখানে পিতাই ধর্ষক, সেখানে কে একটি মেয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে? আসলে তো কোথাও কেউ নেই। আমি ব্যথিত, মর্মাহত, স্তম্ভিত। আমার মনে হচ্ছে এই কদর্য পৃথিবীতে কোথাও এতোটুকু পরিবর্তন আনতে পারিনি আমি। ফালতু সব লেখা লিখি যা পড়ে আমাকে কোরাণ পড়ার উপদেশ দেয় সম্ভাব্য ধর্ষকেরা। যে পৃথিবীতে ধর্ষকরাই ধর্মের পুরোহিত, সমাজের কর্ণধার, সেখানে বেঁচে থাকতেই ইচ্ছা করে না আর। আমি এতোটাই ফ্রাস্ট্রেটেড যে মনে হচ্ছে মৃত্যুও আজ এর চেয়ে বেশি ব্যথিত করতে পারবে না আমাকে। আমাদের মত অকর্মণ্য, অথর্ব মানুষেরা বেঁচে থেকেই বা কী করবে?
আগষ্ট ২০১৭, ইংল্যান্ড